নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট
চুয়াডাঙ্গার মানুষ এখন মরুভূমির দেশে বাস করছে। টানা ১০ দিনের তীব্র ও অতি তীব্র দাবদাহে চুয়াডাঙ্গা জেলার বেশিরভাগ গ্রামগুলোতে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ ও খাওয়ার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে এ জেলার মানুষ। তার ওপর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় চরম সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। আর এ সমস্যার সবচাইতে বেশি সম্মুখীন হয়েছেন জেলার দামুড়হুদা উপজেলার মানুষ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দামুড়হুদা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে পানির স্তর ১৫-২০ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে নলকূপ ও পাম্পে উঠছে না পানি। কিছু কিছু জায়গায় পানি উঠলেও সেটা খুব সীমিত। তবে পানি পেতে অনেকেই ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ করে ২৫০-৩০০ ফুট গভীরে ৪ ইঞ্চি পাইপ দিয়ে মাটির ১২-১৪ ফুট গভীরে পাম্প স্থাপন করছেন।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ ও খাওয়ার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে চরম বিপাকে পড়েছেন টিউবওয়েল ব্যবহারকারীরা। তবে গ্রামবাসীরা পানির চাহিদা মেটাতে গভীর নলকূপ বসানোর চিন্তাভাবনা করছেন। পানির চাহিদা পূরণ করতে ১২-১৫ ফুট গর্ত খুঁড়ে সিমেন্টের ও মাটির রিং বসিয়ে পাম্প নিচে নামানোর পর পানি তুলতে হচ্ছে।
দামুড়হুদা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, দামুড়হুদা উপজেলায় সরকারি পাঁচ হাজারের বেশি ও ব্যক্তি মালিকানা প্রায় ৪০ হাজার সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নলকূপে পানি উঠছে না। বাকিগুলোতে যে পরিমাণে পানি উঠছে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। দামুড়হুদা উপজেলা সদর, মদনা, দর্শনা, কুড়োলগাছি, সদাবরী, নতিপোতা, হাউলি, কার্পাসডাঙ্গা, কুতুবপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে কয়েক হাজার নলকূপে একেবারেই পানি উঠছে না। বাকি নলকূপগুলোতে সামান্য পানি উঠছে। এ অবস্থায় অনেক পরিবার রান্না গোসলসহ অন্যান্য প্রয়োজনে পরিমাণ মতো পানি পাচ্ছেন না।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ ও খাওয়ার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা সদরের চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, আমার ইউপির বেশ কিছু জায়গায় তীব্র দাবদাহের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। টিউবওয়েলের পানি খুবই কম উঠছে। মাঠের সেচ পাম্পগুলোর একই অবস্থা।
দামুড়হুদা উপজেলার কুড়োলগাছি ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামাল বলেন, তীব্র দাবদাহে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ইউপির প্রায় প্রতিটি গ্রামেই টিউবওয়েলে পানি ওঠা একেবারেই কমে গেছে। কিছু টিউবওয়েলে পানি উঠছে না।
দামুড়হুদা মদনা-পারকৃষ্ণপুর ইউপির বাসিন্দা কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, এই এলাকার মাঠের সেচ পাম্পগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। প্রয়োজনের তুলনায় পানি উঠছে না। এতে সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া গ্রামের বেশিরভাগ টিউবয়েল গুলোতে একেবারেই পানি উঠছে না। কিছু কিছু টিউবয়েলগুলোতে পানি উঠলেও তা খুবই কম।
তীব্র দাবদাহের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না।
দামুড়হুদা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, পানির স্তর বছর বছরে নিচের দিকে নামছে। ৭-৮ বছর আগেও এই অঞ্চলে ৫০-৬০ ফুটের মধ্যে ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমেও ১২০-১৩০ ফুটের মধ্যে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে এ জেলার মানুষ।
এ পরিস্থিতির কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যত্রতত্র পুকুর-খাল-বিল ভরাট করে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার ও অপরিকল্পিতভাবে স্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সামনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলে ধারণা করছেন।
Posted ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
ajkerograbani.com | Salah Uddin